আফগানিস্তানের কথা উঠলে সবার আগে কার নামটা মনে পড়ে?
অবশ্যই রশিদ খান। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে তো বটেই যেকোনো সংস্করণেই তাঁর নামটা ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীতিকর।
এরপর মুজিব উর রেহমানের নাম আসবে। আঙুল দিয়ে বল ধরার বৈচিত্র্যে তিনিও কম ভীতিকর নন।
আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলেই এ দুজনের নাম উঠে আসে সবার আগে। রশিদকে সামলাতে পারবে তো বাংলাদেশ? মুজিবকে? অবচেতনভাবেই বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচ মানেই আফগানিস্তানের এই দুই বোলারের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের লড়াই—এমনটাই ভাবা হয়। আজ চিরাচরিত এ ভাবনায় ছেদ টানলেন ফজলে হক ফারুকি।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান ২১৫ রান তোলার পর ম্যাচটা সহজ মনে হয়েছিল অনেকের। এই সহজের মাঝে ‘কাঠিন্য’টুকু ছিলেন রশিদ-মুজিব।
এই স্পিন জুটিকে ভালোভাবে খেলতে পারলে জয়টা সহজেই বের করে আনা সম্ভব।
কিন্তু ফজলে হক ফারুকি আবির্ভূত হওয়ায় হিসেবটা মেলেনি। কিন্তু কে এই ফারুকি?
কদিন আগে শেষ হওয়া বিপিএলে মিনিস্টার ঢাকার হয়ে খেলেছেন এই বাঁ হাতি পেসার। তিন ম্যাচে ২ উইকেট নেওয়ায় তাঁকে তখন সেভাবে চেনা যায়নি। আর ম্যাচগুলো হয়েছিল সিলেট ও মিরপুরে। আজ চট্টগ্রামের উইকেট বের করে এনেছে আসল ফারুকিকে, যাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০২০ আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের নেটে আর পরের আইপিএলে চেন্নাইয়ের নেটে।
আইপিএলের এ দুটি সংস্করণে নেট বোলার হিসেবে ক্রিস গেইল, মহেন্দ্র সিং ধোনি, সুরেশ রায়নাদের নাজেহাল করেছিলেন। আজ যেমন বাংলাদেশের ইনিংসে তৃতীয় ওভারে দুই ওপেনারকে তুলে নিয়েছেন তিন বলের ব্যবধানে।
৩ ওভারের মধ্যে ১৫ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আরও ২ ওভার পর ১৮ রানে ৪ উইকেটে পরিণত হয় এই ফারুকির বিধ্বংসী বোলিংয়ে।
৪টি উইকেটই তাঁর। বাংলাদেশের ইনিংসে ৫ ওভার শেষে তাঁর বোলিং ফিগার ৩-১-৯-৪!
এবার আইপিএল নিলামে তাঁকে ৫০ লাখ রুপি ভিত্তি মূল্যে কিনেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (টি-টোয়েন্টি) অভিষেক গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবুধাবিতে।
সে ম্যাচে ১ উইকেট নেওয়ার পর ওয়ানডে অভিষেক গত মাসে দোহায়। সে ম্যাচেও নিয়েছেন ১ উইকেট। তাতে ফারুকিকে সেভাবে চেনা যায় না। ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক তাঁর। পরের বছর খেলেন আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী এ পেসার।
গত বছর আফগানিস্তান টেস্ট দলে ডাক পেলেও মাঠে নামা হয়নি। এরপর তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকই হলো তাঁর।
এর আগে মাত্র একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা ফারুকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শক্ত ভিত কি পেয়ে গেলেন এই ম্যাচ থেকেই? সময়ই তা বলে দেবে। তবে তাঁর ভিতটা যে বেশ শক্ত সেটা বোঝা যায় উঠে আসার পথটা দেখে।
২০২০ আইপিএলে পাঞ্জাবের নেটে ওয়াইড ইয়র্কারে গেইলকে বেশ ভুগিয়েছিলেন ফারুকি। রের আইপিএলে ধোনি ও রায়নাকে ভুগিয়েছেন একই ডেলিভারি এবং তাঁর সঙ্গে খাটো লেংথ থেকে তোলার দ্রুতগতির বাউন্সারে।
চেন্নাই এ নিয়ে তখন টুইটও করেছিল। সেসব পরিশ্রমই ফারুকির এবারে আইপিএল দল পাওয়ার ভিত হতে পারে, আজকের পারফরম্যান্সটা যেন তারই প্রমাণ।টুইটারে চেন্নাইয়ের পোস্ট করা সে ভিডিওতে দেখা গেছে, ধোনি ও রায়নায় যেসব জায়গায় দুর্বল সেখানে অনবরত বল করে গেছেন ফারুকি। আজকের ম্যাচেও তো এর ব্যত্যয় ঘটেনি। লিটন, তামিম ও মুশফিকের ‘ছিদ্র’ খুঁজে পেতে সময় লাগেনি তাঁর।
ম্যালকম মার্শালকে নিয়ে ওয়াসিম আকরামের একটি কথা আছে, ‘মাত্র দুটি ডেলিভারিতেই তিনি ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা ধরে ফেলতেন।’ বড় মাপের বোলার হতে এই গুণটা থাকতেই হয়। ফারুকির হাত থেকে এই গুণটা বের হওয়ায় আফগানিস্তান যে শুধু ‘রশিদ-মুজিব’ সর্বস্ব না, সে কথা বলার সময় বুঝি এল!
Post a Comment